নিজস্ব প্রতিনিধি May 06, 2024
ক্রিপ্টো দুনিয়ার হাঁড়ির খবর

ক্রিপ্টোগ্রাফি আদতে গ্রিক শব্দ ‘ক্রিপ্টোস’ থেকে এসেছে, যার অর্থ গোপনীয়তার চর্চা

“তোমার গোপন কথাটি, সখী, রেখোনা মনে” এই জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত অনেকের মতো আমারও খুব প্রিয় গান। তবে আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় এই গানকে কেউ যদি জীবনের মূলমন্ত্র করে নেন, তবে তাঁর পক্ষে জীবনে পথ চলায় সমূহ বিপদ। কেন বলছি এ কথা? আজকের স্মার্ট জগতে অ্যান্ড্রয়েড স্ক্রিনলক কিম্বা এটিএম সব কিছুই কতগুলি বৈজ্ঞানিক সংকেতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এ দিকে আমাদের আশেপাশে তথাকথিত শিক্ষিত ডিগ্রিধারীদের মাঝেই কিছু অসৎ ব্যক্তি মুখিয়ে আছে  কোনও রকমে এই সব সংকেতের হদিশ পেয়ে আমাদেরকে সর্বস্বান্ত করার জন্য। অনেক সময়ই আমরা শুনি, কিছু মানুষ ভুয়ো পরিচয় দেওয়া  অজ্ঞাত  ব্যক্তিকে বিশ্বাস করে ওটিপি বলে দেওয়ার ফলে নিমেষে রীতিমতো ফকির হয়েছেন, কারোর ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে কোটি কোটি টাকা তোলা হয়েছে। ইদানীং আরও ভয়ানক কিছু ঘটনা ঘটছে, ফোনে বিভিন্ন সংস্থার নামে ভুয়ো মেসেজ পাঠানো আদতে জালিয়াতির প্রথম ফাঁদে, পরদিন কাগজে হেডলাইন এক ক্লিকে লক্ষাধিক অর্থ গায়েব। তা এই গোপন সংকেতের প্রচলনই বা কবে হল? কেনই বা হল? আর আজই বা সাংকেতিক বার্তার প্রেক্ষাপট বা ব্যবহারের ধরন কী রকম?

ক্রিপ্টো দুনিয়ার হাঁড়ির খবর

শেয়ার কেনাবেচা চলছে স্টক মার্কেটে

ঐতিহাসিক নিদর্শন বলছে, স্পার্টাদের স্কাইটেলের মাধ্যমে প্রথম সাংকেতিক বার্তার ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটে। স্কাইটেলে অর্থাৎ খাঁজকাটা কাঠের টুকরোয় প্রথমে ফিতের মতো করে একটি কাগজ জড়িয়ে তাতে বামদিক থেকে ডানদিকে একটি অর্থবহ বাক্য লেখা হত। তারপর কাগজটি খুলে নিলেই শব্দগুলো ও অক্ষরগুলো অবিন্যস্ত হয়ে যেত, ফলে সহজেই সংকেতের উদ্ধার সম্ভব হতনা। এরপর মিশরীয় হায়রোগ্লিফস বা ক্লে ট্যাবলেট, অনেক কিছুতেই সাংকেতিক বার্তা প্রেরণের নিদর্শন মিলেছে। মোম মাখানো কাঠের ট্যাবলেটে গোপন বার্তা পাঠিয়ে পারস্যের রাজা জেরেক্সেসের সম্ভাব্য আক্রমণ স্তিমিত করে দিয়েছিলেন ডেমারেটাস নামক একজন গ্রিক, যিনি এককালে চুরির দায়ে দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। আজকের যুগে এই দেশপ্রেম ও বিরল। গ্রিক রাজা হিস্টাইরাসের আমলে প্রথমে বার্তাবাহকের নেড়া মাথায় বার্তা লিখে চুল গজালে তারপর তাকে পাঠানো হত, যা আজকের দিনে অনেকটাই বোকামি, সময়ের নিরিখে। ক্যাপসুলের আড়ালে মসলিনে লেখা চিনা বার্তা কিংবা আরবীয়দের পলিঅ্যালফাবেটিক সাইফার অর্থাৎ বহুবর্ণী সাংকেতিক লিখন প্রণালী কিংবা রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের প্রবর্তিত সেই বিখ্যাত সিজার সাইফার (যেখানে বার্তার প্রতিটি অক্ষরকে ইংরেজি বর্ণমালা অনুযায়ী ঠিক তার পরবর্তী তৃতীয় অক্ষর দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হত) সবই ক্রিপ্টোগ্রাফিক ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। সাইফার হচ্ছে আসল বার্তার সাংকেতিক রূপ। ক্রিপ্টোগ্রাফি আদতে গ্রিক শব্দ ‘ক্রিপ্টোস’ থেকে এসেছে, যার অর্থ গোপনীয়তার চর্চা। এবার প্রশ্ন হল গোপনীয়তা কিভাবে বজায় রাখব? ধরুন, আপনি আপনার বন্ধুকে ‘গুগল পে’র মাধ্যমে একশো টাকা পাঠাতে গিয়ে দেখলেন, আপনারই অ্যাকাউন্ট কোনও ভাবে হ্যাক করা হল, বা নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যায় আপনারই অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচশো টাকা কেউ তুলে নিল। কী ভাবে হল এই অসাধ্য সাধন? আপনার  বা আপনার বন্ধুর এই যোগাযোগের মাধ্যমে মুকুলের সেই কোনও এক ‘দুষ্টু লোক’ আড়ি পেতে বসেছিল, সুযোগ বুঝে মাঠে নামতেই আপনার টাকা ‘ভ্যানিশ’।

ক্রিপ্টো দুনিয়ার হাঁড়ির খবর

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের ব্যবহৃত এনিগমা মেশিন

আপনি ভাবছেন, ধুর বাজে কথা বলার জায়গা পায়নি, ‘গুগল পে’তে এসব জোচ্চুরি হয় না। মানলাম, তাই বলে কোথাও কোনও মাধ্যমে এই তৃতীয় অবাঞ্ছিত ব্যক্তি বসে নেই, এটাতো গ্রহনযোগ্য নয় মোটেই। তাই আপনাকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। আজ থেকে কতদিন আগে একটি বিশ্বযুদ্ধে এই ক্রিপ্টোগ্রাফি নামক শাখার ব্যবহার সারা দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিল, যা নিয়ে আজও আলোচনা খুব কমই শোনা যায়। বোমা, লাঠি, মারদাঙ্গার বাইরের পৃথিবীতে মস্তিষ্কের উপযোগী প্রয়োগ সবচেয়ে জরুরি। এ ক্ষেত্রে জার্মান এনিগমা মেশিনের উল্লেখ না করলে বড়ো অন্যায় হবে। আর্থার শার্বিয়াস নামের এক ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোকের দ্বারা টাইপরাইটারের আদলে তৈরি এই এনিগমা যন্ত্র। যন্ত্রে থাকা তিন থেকে পাঁচটি রোটরের চাকতিকে ইংরেজি বর্ণমালার প্রত্যেক অক্ষরের সাপেক্ষে ২৬টি ধাপ ঘোরানো যেত, ঘড়ির কাঁটার সাথে এর যথেষ্ট সাদৃশ্য ছিল। দুর্বোধ্য কোড বানিয়ে নাৎসিদের বার্তা প্রেরণের কৌশল এবং অ্যালান টুরিং নামক এক যুগপুরুষ কর্তৃক এই এনিগমা কোডের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি, এগুলো আজ কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। (চলবে)

চিত্রসৌজন্য:  https://pixabay.com

Post a Comment

[random][fbig2][#e74c3c]
Powered by Blogger.