নিজস্ব প্রতিনিধি March 10, 2014

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ঐতিহাসিক সাদাকালো ফিল্ম নিমেষের মধ্যে রঙিন করে তুলতে পারে। কিন্তু জটিল শিল্পকীর্তির ক্ষেত্রে অবশ্য এই প্রযুক্তির সীমা স্পষ্ট হয়ে যায়।



সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ইমেজ প্রসেসিং ও সৃষ্টির ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি ঘটাচ্ছে। “ড্যাল-ই” বা “মিডজার্নি”-র মতো প্রণালী টেক্সট থেকে ছবিতে রূপান্তর ঘটিয়ে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এর আগে কখনো এত সহজে, এত দ্রুত এবং এত সস্তায় ডিজিটাল ইমেজ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি।

বার্লিনের শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিনসেন্ট ব্রিৎস “আর্টিফিশিয়াল ক্রিয়েটিভিটি” সেমিনারে তার ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সর্বশেষ গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি মনে করেন, “এটা অনেকটা ক্ল্যাসিকাল পেইন্টিংয়ের যুগের পর প্রথম ফটোগ্রাফারদের আবির্ভাবের সঙ্গে তুলনীয়। অবশ্যই প্রতিরোধ দেখা গিয়েছিল। মানুষ বলেছিল, এটা শিল্প নয়, নকল বা অন্য কিছু। তারপর কয়েক বছর ও দশকের পর আলোকচিত্র শিল্পীর আইডিয়াও প্রতিষ্ঠা পায়। আমার মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যাবে।”আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ঐতিহাসিক সাদাকালো ফিল্ম নিমেষের মধ্যে রঙিন করে তুলতে পারে। কিন্তু জটিল শিল্পকীর্তির ক্ষেত্রে অবশ্য এই প্রযুক্তির সীমা স্পষ্ট হয়ে যায়।

ভিনসেন্ট ব্রিৎস বলেন, “আমার মতে সমস্যা হলো এই যে, কোনো আর্টিস্টিক ভিডিওতে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘাসের রং গোলাপি রাখলে এআই সেই রং বদলে সবুজ করে দেবে, কারণ সেটি গড় হিসেব অনুযায়ী কাজ করে।”

সর্বশেষ প্রজন্মের এআইভিত্তিক গ্রাফিক প্রোগ্রামগুলোতে শেডিং বা লাইটিংয়ের মতো জটিল ইমেজ প্রসেসিং কোনো সমস্যা নয়। আগে যে কাজ করতে কয়েক দিন বা ঘণ্টা সময় লাগতো, এখন তা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে করা সম্ভব হচ্ছে।

ভিজুয়াল কমিউনিকেশনসের ছাত্র হিসেবে অ্যার্নস্ট আউগুস্ট গ্রেফে মনে করেন, “এটা সত্যি বেশ হুমকির মতো। আরও বেশি মানুষ অনন্ত ছবি সৃষ্টি করতে পারছে। আমি এত সময় ব্যয় করে যে ছবি সৃষ্টি করছি, সেগুলোর মূল্য আর আগের মতো নেই। কিন্তু একই সঙ্গে নতুন টুলগুলো রপ্ত করে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বৃহত্তর কনসেপ্টে প্রয়োগ করার প্রয়োজন আছে।”

“ড্যাল-ই” বা “মিডজার্নি”র মতো প্রোগ্রাম প্রথাগত সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। সেই সব টুল অত্যন্ত সহজে ব্যবহার করা যায়। প্রোগ্রামে বর্ণনা হিসেবে কিছু লিখলেই এআই সেই নির্দেশকে ছবি হিসেবে তুলে ধরে। শৈল্পিক মান কখনো ভালো না হলেও সৃজনশীলতার কোনো সীমা নেই।

ভিজুয়াল কমিউনিকেশনসের ছাত্র হিসেবে ফিলিপ ডলিঙার বলেন, “শিল্পী হিসেবে আমি নতুন পদ্ধতি ও টুল দিয়ে নতুন ইমেজারি ও নতুন কিছু করার সুযোগকে বাড়তি ক্ষমতায়ন হিসেবে দেখি। আমি এখনো এটিকে আরও বড় সুযোগ মনে করছি।”

এমন প্রবণতা সম্পর্কে বার্লিন শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিনসেন্ট ব্রিৎস বলেন, “কীভাবে ছবি আঁকবে, একজন ডিজাইনারকে যে আর সেটা ভাবতে হচ্ছে না, সেটা সত্যি রোমাঞ্চকর। তার বদলে কত ভালোভাবে বর্ণনা দেওয়া যায়, সেটা ভাবতে হচ্ছে, যাতে কম্পিউটার সহজে আঁকতে পারে। কাজটা প্রায় একই থাকলেও পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।”

ইন্টারনেটে বাস্তব মানুষের কোটি কোটি ছবি থেকে এআই-এর সংগৃহীত পিক্সেল দিয়ে এমন মানুষের ছবি সৃষ্টি করা হচ্ছে, যাদের কোনো অস্তিত্বই নেই। এর উদাহরণ তুলে ধরে ভিনসেন্ট ব্রিৎস বলেন, “ভাবুন, আমি আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সব ছবি ডাউনলোড করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে সেগুলো ঢুকিয়ে আপনার ছবি সৃষ্টির নির্দেশ দিলাম। এআই শুধু সেসব ছবি দেখে আপনার একটি ছবি সৃষ্টি করবে। আগের কোনো ছবি কিন্তু প্রক্রিয়াজাত করবে না। আপনার ছবি প্রত্যেকটি পিক্সেলের ভিত্তি হলেও সেটা তার নিজস্ব সৃষ্টি। তখন ব্যক্তিগত অধিকারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা কঠিন হয়ে উঠবে।”

তথ্য সংরক্ষণ, কপিরাইট ও নৈতিক বিষয় নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মনে সংশয় রয়েছে। তাছাড়া এআই তাদের নিজস্ব পেশাজীবনে হুমকি বয়ে আনতে পারে, এমন দুশ্চিন্তাও থেকে যাচ্ছে।

Post a Comment

[random][fbig2][#e74c3c]
Powered by Blogger.